ভিনেগার (Vinegar)কী?
অ্যাসিসিটিক এসিডের 6 -10% জলীয় দ্রবণকে ভিনেগার বলা হয় ।
ইথানয়িক এসিড থেকে ভিনেগার প্রস্তুতি(Preparing Vinegar from Ethanoic Acid):
মূলনীতি: কক্ষ তাপমাত্রায় ইথানয়িক এসিড তরল। এ তরল উপাদানকে বিশুদ্ধ পানিতে নির্দিষ্ট শতকরা পরিমাণে দ্রবীভূত করে ভিনেগার প্রস্তুত করা হয়। দ্রবণ প্রস্তুত করার সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন দ্রবণের মধ্যে ইথানয়িক এসিডের পরিমাণ কোনো অবস্থাতেই 6% এর নিচে বা 10% এর উপরে না থাকে। এভাবে উৎপন্ন ভিনেগারকে White ভিনেগার বা সাদা ভিনেগার বলে। কুইক ভিনেগার পদ্ধতি অনুসরণ করে তোমরা এটি প্রস্তুত করতে পার। ইথানেয়িক এসিডকে পাঁতিত পানিতে দ্রবীভূত করে 6 – 10% লঘু দ্রবণ তৈরি করলে ভিনেগার পাওয়া যায়।
উপকরণ : বিকার, মেজারিং সিলিন্ডার (measuring Cylinder), পরিষ্কার নাড়ন কাঠি বা কাচঁদন্ড, বিশুদ্ধ ইথানোয়িক এসিড় বা গ্লাসিয়াল ইথানেয়িক এসিড ও পরিষ্কার শুষ্ক বোতল।
পাইরোলিগনাস এসিড হতে ইথানয়িক এসিড উৎপাদন: পাইরোলিগনাস এসিড স্তরে চুন মিশিয়ে পাতিত করলে প্রপানোন, মিথানল প্রভৃতি জৈব পদার্থ বাম্পাকারে বেরিয়ে যায় এবং ইথানয়িক এসিড, ক্যালসিয়াম ইথানয়েট রূপে পাতন পাত্রে অবশেষ থাকে। এ ইথানয়েটকে পৃথক করে এর সাথে প্রয়োজনীয় পরিমাণ সালফিউরিক এসিড মিশ্রিত করে পাতিত করলে ইথানয়িক এসিড গ্রাহক পাত্রে জমা হয়। এতে শতকরা 40-60 ভাগ এসিড থাকে।
CH3-COOH +Ca(OH)2 → (CH3-COO)2Ca + H2O
ক্যালসিয়াম ইথানয়েট
(CH3-COO)Ca + H2SO4 → CH3-COOH + CaSO4
ইথানয়িক এসিড
বিশোধন (গ্ল্যাসিয়াল এসিড প্রস্তুতি) : প্রাপ্ত এসিডকে কস্টিক সোডার সাথে প্রশমিত করলে সোডিয়াম ইথানয়েড (CH3-COONa.3H2O) গঠিত হয়। কেলাস গুলিকে হেঁকে পৃথক করে তাপ দিয়ে শুষ্ক করা হয়। এ শুষ্ক সে ইথানয়েটকে গাঢ় H2SO4 এর সাথে পাতিত করলে বিশুদ্ধ ইথানয়িক এসিড (99.5%) উৎপন্ন হয়। এসিড 16-50 তাপমাত্রায় জমে বরফের ন্যায় কঠিন আকার ধারণ করে বলে একে গ্ল্যাসিয়াল অ্যাসিটিক এসিড বলে।
CH3-COOH + NaOH → CH3-COONa + H20
CH3-COONa + H2SO4 → CH3COOH + Na2SO4
প্রস্তুত প্রণালী :
১.250 mL আয়তনের একটি বিকার ও একটি মিজারিং সিলিন্ডার পাতিত পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নাও।
২.মিজারিং সিলিন্ডার দিয়ে মেপে 90 94 mL পানি বিকারে নাও।
৩.100 mL পূর্ণ হতে যতটুকু ইথানয়িক এসিড লাগে তা মিজারিং সিলিন্ডারে নাও এবং বিকারের পানিতে আস্তে আস্তে যোগ কর।
৪.নাড়ন পানি বা কাচদন্ড দিয়ে পানি ও এসিড আস্তে আস্তে ভাল ভাবে মিশাও যেন কোন তরল ছিটকে বাইরে না পড়ে ।
৫. পরিষ্কার শুষ্ক বোতলে ভরে লেভেল লাগিয়ে শতকরা সংযুক্তি ও উৎপাদন তারিখ লিখ এবং সংরক্ষণ কর। তোমরা তত রান্নাঘরের উপকরণ ব্যবহার করে ঘরে বসেই ভিনেগার তৈরী করতে পার। বাজার থেকে বিশুদ্ধ ইথানয়িক এসিড ও পাতিত(Distilled) পানি কিনে আন পাতিত পানির পরিবর্তে গভীর নলকুপ বা অন্য উৎস থেকে প্রাপ্ত খাবার পানি ভাল করে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিলেও চলবে এজন্য চায়ের কাপ গ্লাস বা অনুরুপ যে কোন কাচের, সরামিক বা প্লাস্টিকের তৈরী উপকরণ ব্যবহার করতে পার। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন এসিড ও পানির অনুপাত ঠিক থাকে। একটি বিষয় সতর্কতার সাথে খেয়াল রাখতে হবে তা হল পাত্রে আগে পানি মেপে নিতে হবে এবং তার মধ্যে প্রয়োজনীয় এসিড আস্তে আস্তে যোগ করে ভাল করে মেশাতে হবে।
আখের রস হতে মল্ট ভিনেগার প্রস্তুতি (Preparing Malt Vinegar from Sugarcane):
উন্নত মানের রসালো আখকে সংগ্রহ করে এর পাতা, শিকড় ও উপরের বাকলকে অপসারণ করে টুকরা করে নিতে হবে । এরপর পানি দ্বারা ভালোভাবে টুকরাগুলোকে ধুয়ে পরিষ্কার করে কিছুক্ষণ খাড়া করে রাখ। আখের উপর থেকে মোটামুটিভাবে পানি ঝরে যাবার পর একে ভালোমতো মাড়াই করে রস বের করেতে হবে। আখের রসের মধ্যে প্রায় 3-4% চিনি বর্তমান থাকে। প্রাপ্ত রসকে নরম কাপড় দ্বারা ঘেঁকে নিয়ে কড়াইতে ধীরে ধীরে তাপ দিয়ে দ্রবণের 5 অংশ কমিয়ে ফেলতে হবে। এ ঘন দ্রবণের মধ্যে প্রায় 10% চিনি বর্তমান থাকে। ঘন দ্রবণকে ঠান্ডা করে এর মধ্যে (NH)2SO4 ও (NH4)3PO4 যোগ করে দ্রবণকে একটি কাঠি দিয়ে ভালোমতো নেড়ে নাও। এবার এ দ্রবণকে 25-30°C তাপমাত্রায় রেখে মিশ্রণের মধ্যে ঈস্ট যোগ করে পুনরায় দ্রবণকে কাঠি দ্বারা নেড়ে, ছিদ্রযুক্ত ঢাকনা দ্বারা ঢেকে পাত্রটিকে টাওয়াল দ্বারা তিন দিন ঢেকে রাখতে হবে। এ সময় গাঁজন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় এবং ইষ্ট থেকে ইনভার্টেজ ও জাইমেজ নামক দুটি এনজাইম উৎপন্ন হয় নিসৃত ইনভারটেজ রসের চিনিকে আর্দ্র বিশ্লেষিত করে গ্লুকোজ ও ফুক্টোজে পরিবর্তিত করে এবং জাইমেজ এনজাইম গ্লুকোজ ও ফুক্টোজকে আর্দ্র বিশ্লেষিত করে ইথানল ও কার্বন ডাইঅক্সাইডে পরিণত করে।
এক্ষেত্রে ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয় এবং প্রক্রিয়ার শেষে দ্রবণে প্রায় 10% ইথানল থাকে। এ অ্যালকোহলের দ্রবণ ই ভিনেগার প্রস্তুত করা হয়। এখন মাইকোডার্মা অ্যাসিটি নামক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে 10% ইথানল জারিত হয়ে (6-10)% ইথানেয়িক এসিডে পরিণত হয়।
এ বিক্রিয়াটি তাপোৎপাদী এবং ব্যাকটেরিয়া স্বাভাবিক ক্রিয়া ও বৃদ্ধির জন্য অনুকূল তাপমাত্রা 30-35°C। তাই তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্র রাখা প্রয়োজন। এরূপে উৎপন্ন 6–10% লঘু ইথানেয়িক এসিডকে সংগ্রহ করে ছেকে পরিষ্কার পাত্রে তিন মাসের জন্য এ অন্ধকার স্থানে রেখে দিতে হয়। একে এজিং করা বলে। এজিং এর সময় যত বেশি হয় ভিনেগারের গন্ধ ও স্বাদ তত ভালো হয় ।
ভিনেগারের খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ কৌশল(Food Presservation Technique of Vinegar):
বস্তুত আমাদের খাদ্য উপাদানগুলো দীর্ঘ চেইনের পলিমারীয় যৌগ। খাদ্য উপাদানের এসব পলিমারীয় কাঠামো পরিবেশের বিভিন্ন অবস্থায় জন্মলাভ করা অসংখ্য অনুজীবের প্রভাবে ভেঙ্গে যায়। ফলে খাদ্যের স্বাদ ও বৈশিষ্ট্য নষ্ট হয়ে দুগন্ধ ছড়ায়। সুতরাং খাদ্যকে পচনের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে খাদ্যের কাঠামো নষ্ট করার মত অণুজীব যাতে জন্মাতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। ভিনেগার একটি অত্যন্ত বহুল ব্যবহৃত ও প্রচলিত প্রাকৃতিক প্রিজারভেটিভস। এটি বাজারে সিরকা নামেও পরিচিত। এটি দামে সস্তা ও সহজলভ্য। এটি খাদ্যের গুণগত মানকে অপরিবর্তিত রাখে। উপরন্তু এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অতি সহজে পানিতে দ্রবীভূত হয়ে যায়। বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত ও সংরক্ষণে ভিনেগার অতুলনীয় প্রিজারভেটিভস। যেমন আচার, চাটনি, জেলী, জ্যাম, মারমালেট প্রস্তুতিতে এবং ফল, শাক-সবজি, মাছ-মাংস সংরক্ষণে ভিনেগার ব্যবহৃত হয় ।
খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ ক্রিয়াকৌশল:
(i) ভিনেগারের মূল উপাদান ইথানয়িক এসিড বা অ্যাসিটিক এসিড (CH3-COOH) সাধারণভাবে ইথানয়িক এসিডের 6-10% জলীয় দ্রবণই ভিনেগার এর pH মান প্রায় 4.74 যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। যেসব খাদ্যের pH মান 4.5 অপেক্ষা কম সেগুলো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা নষ্ট হয় না। তবে ঈস্ট ও মোল্ড এ pH 3 মানেও বংশ বিস্তার করতে পারে। অধিকাংশ অণুজীবের বংশবিস্তারের অনুকূল pH পরিসর 6.5-7.5। খাদ্যদ্রব্যে ভিনেগার যোগ করার ফলে তা উপাদানের pH মানকে কমিয়ে দেয়দএ মান 5 থেকে 4 এর নিচে নেমে আসে। ফলে অণুজীব থেকে খাদ্য দ্রব্য সুরক্ষিত থাকে।
(ii) অণুজীব থেকে নিসৃত এনজাইম খাদ্য পচনের ফারমেন্টেশন বিক্রিয়ায় প্রভাবক হিসাবে কাজ করে। এনজাইম এক ধরনের প্রোটিন এবং এনজাইমের প্রোটিন শিকলের নাইট্রোজেন পরমাণুতে যে মুক্তজোড় ইলেকট্রন থাকে তা সক্রিয় প্রান্ত হিসাবে কাজ করে এবং খাদ্য দ্রবকে নষ্ট করে। ইথানেয়িক এসিড দুর্বল এবং এটি খাদ্যে ব্যবহার করলে অল্প আয়নিত হয়ে H+ আয়ন দেয়। কিন্ত ইথানেয়িক এসিড ব্যবহারের ফলে যে H+ আয়ন সৃষ্ট হয় যা প্রোটিন শিকলের ঐ সক্রিয় প্রান্তকে প্রশমিত করে।
CH3-COOH → CH3-COO + H+
ফলে এনজাইম আর প্রভাবন ক্রিয়া ঘটাতে পারে না এবং ফারমেন্টেশন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে খাদ্য পচে না এবং সুরক্ষিত থাকে। H+ এর ঘনমাত্রা যত বেশী হবে অণুজীবের জন্য তত বেশী প্রতিকুল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এভাবেই ভিনেগার খাদ্য সংরক্ষণ করে থাকে।
সম্প্রতি বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে যে, ভিনেগার 99% ব্যাকটেরিয়া, 82% মোল্ড এবং 8০% জীবাণু ও ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে।
(iii) এর স্ফুটনাঙ্ক পানি অপেক্ষা বেশি হওয়ায় (118°C) খাদ্য | প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় তাপ প্রযোগে এর বাষ্পীভূত হবার সুযোগ থাকে না।
প্রিজারভেটিভস হিসেবে ভিনেগারের সীমাবদ্ধতা:
দুধ সংরক্ষনে ভিনেগার ব্যবহৃত হয় না কেন ?
খাদ্য সংরক্ষণে ভিনেগার অতুলীয় । কিন্তু দুধের প্রিজাভেটিভসরূপে কাজ করতে পারে না। কারণ দুধে চর্বির সাথে প্রোটিন থাকে। প্রোটিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কেইসিন। দুধে ভিনেগার যোগ করলে এটি আয়নিত হয়ে এসিটেট আয়ন এবং H+ আয়ন প্রদান করে। ফলে H+ প্রোটিনে বিদ্যমান অ্যামাইড বন্ধনের নাইট্রোজেনে উপস্থিত মুক্তজোড় ইলেকট্রনের সাথে তার যুক্ত হয়। তাই প্রোটিন অণুগুলোর মধ্যস্থ আন্ত:আকর্ষণ বল H+ এর প্রভাবে নষ্ট হয়ে যায়। এমতাবস্থায় প্রোটিন অণুগুলো পরস্পরের কাছে এসে পিন্ডীভূত এবং বিস্তারণের মাধ্যমে ভেসে ওঠে। মূলত ভিনেগার এখানে ইলেকট্রোলাহঢ়রূপে কাজ করে। অর্থাৎ দুধে ভিনেগার যোগ করলে কোয়াগুলেশন ঘটে। তাই দুধ সংরক্ষণে ভিনেগার ব্যবহৃত হয় না।
ভিনেগারকে উদ্ধৃষ্ঠ খাদ্য সংরক্ষক কেন? ব্যাখ্যা কর।
১. ভিনেগারের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
২. এটি মৃদু এসিড হওয়ায় খাবারের সাথে গ্রহণ করলে এসিডিটি বাড়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না, বরং খাবার ও দেহের pH এর সমতা বজায় রাখে।
৩. এটি অম্লীয় দ্রবণ বিধায় এর প্রভাবে সংরক্ষিত খাদ্য দ্রব্যের দ্রবণের pH মান কমে যায়। অণুজীব বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া জন্মানো ও বংশ বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ পায় না। ইথানোয়িক এসিডের 6% জলীয় দ্রবণের pH মান প্রায় 2.35 যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট।
৪. এটি পানিতে যেকোনো অনুপাতে দ্রবণীয়। কারণ এটি পানির অণুর সাথে কার্যকরী হাইড্রোজেন বন্ধন গঠন করতে পারে। ফলে খাদ্যের পানির সাথে সহজে মিশে সর্বত্র সুষম ঘনমাত্রা বজায় রেখে অণুজীবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
৫. এর স্ফুটনাঙ্ক পানি অপেক্ষা বেশি হওয়ায় খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় তাপ প্রয়োগে এর বাষ্পীভূত হওয়ার সুযোগ থাকে না।
খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে ভিনেগারের গুরুত্ব (Importance of Vinegar in Preserving Food):
খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে ভিনেগারের গুরুত্ব অপরিসীম। ভিনেগার একটি উৎকৃষ্ট ও উন্নত মানের প্রিজারভেটিভস। খাদ্যদ্রব্য পচনের ক্ষেত্রে যেসব অণুজীব মুখ্য ভূমিকা পালন করে তাদের বংশ বিস্তারের জন্য সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। এটি সহজলভ্য, অপেক্ষাকৃত কম দামী এবং খাদ্যদ্রব্যের গুণে ও মানের উপর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। ইথানোয়িক এসিডের দ্রাব্যতা অধিক হওয়ায় অতি সহজে এটি জলীয় দ্রবণে দ্রবীভূত হয়ে সর্বত্র সুষম ঘনমাত্রা বজায় রেখে অণুজীবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ভিনেগার খাদ্যের প্রস্তুতকরণ, গুণগত মান বৃদ্ধি ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১. রান্নার কাজে ভিনেগার: বিভিন্ন প্রকার মসলাযুক্ত মাছ, মাংস, যেমন- রোস্ট, রেজালা, কাবাব ইত্যাদি রান্না করতে অন্যান্য উপাদানের মত ভিনেগার ব্যবহার করা হয়। এর ফলে প্রস্তুতকৃত খাদ্য সুস্বাদু, নরম, স্বাস্থ্যপ্রদ (সহজে হজম হওয়া) হয় এবং খাদ্য সহজে পচে নষ্ট হয় না। যেমন, হাড় সহ মুরগী, বা অন্য কোন প্রাণীর মাংস ভিনেগার সহযোগে রান্না করলে হার থেকে ক্যালসিয়াম দ্রবীভুত হয়ে ঝোল বা স্যুপে চলে আসে। দেখা গেছে তাতে রান্নাকৃত মাংসশুধু ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধই হচ্ছেনা একই সাথে নতুন সুগন্ধি যোগ করে তা সুস্বাদুও হচ্ছে।
২. খাদ্য দ্রব্য সংরক্ষণে ভিনেগার: সামান্য পরিমাণ ভিনেগার গোল আলু, শাকসবজি, মাছ, মাংস এমনকি ফলমুল যোগ তার সুগন্ধি ও শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং সতেজ হয়। বৈজ্ঞানিক ভাবে স্বীকৃত যে,খাদ্যে ভিনেগার যোগ করলে শুধুমাত্র ভিনেগারই যোগ করা হয় না-এর ফলে খাদ্যে যোগ হয় ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, প্রোটিন এবং শর্করা। মাছ-মাংসকে ভিনাগারের সাহায্যে প্রক্রিয়াজাত করলে মাছ-মাংস অণুজীব দ্বারা আক্রান্ত হয় না এবং এর পুষ্টি মানেরও তেমন কোনো ভর্তন ঘটে না। ভিনেগারের সাহায্যে মাছ-মাংসকে দীর্ঘ সময় মানসম্মত রেখে সংরক্ষণ করা যায়। এর ফলে মাছ, মাংসের সঠিক বর্ণও অপরিবর্তিত থাকে। মাছ-মাংস কৌটাজাতকরণের ক্ষেত্রে প্রিজারভেটিভস হিসেবে ভিনেগারের ব্যবহার অপরিসীম। ভিনেগারের সাহায্যে মাছ মাংস সংরক্ষণের ফলে সারা বছর একে ব্যবহার উপযোগী রেখে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট লাভবান হওয়া যায়।
৩. রোগ প্রতিরাধে ভিনেগার: খাদ্যদ্রব্যে ভিনেগারের উপস্থিতি খাবারের রুচি বৃদ্ধি করে, রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়, হজম শক্তি বাড়ায়, শরীরে সৃষ্ট তরল অপদ্রব্য নিঃসরণ সহজ করে দেয়, রক্তের অপ্রয়োজনীয় চর্বি বিদূরিত করে শরীরকে স্লিম রাখতে সাহায্য করে। সম্প্রতি পরীক্ষায় প্রমাণিত যে ভিনেগার রক্তচাপ ও রক্তের কোলেস্টরলের পরিমাণ হ্রাস করে। ভিনেগার সমৃদ্ধ খাবার খেলে ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।