d) যদি কোষ-১ লঘু NaCl এর পরিবর্তে এ গাঢ় NaCl ব্যাবহার করা হয় তবে পাত্রে NaOH উৎপন্ন হয় বিশ্লেষণ করো ।
e) কোষ-১ ও ৩ শক্তি উভয় তড়িৎ রাসায়নিক কোষ কিন্তু এদের শক্তি রুপান্তর প্রকিয়া ভিন্ন কেন বিক্রিয়া সহ বিশ্লেষণ করো।
f) কোষ-৩ হতে অধিক সময় ধরে তড়িৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে কী? তোমার মতামত দাও।
(d) নং প্রশ্নর উত্তর:-
যে কোষে একটি গলিত বা দ্রবীভূত তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্যদিয়ে বাইরের উৎস থেকে তড়িৎ প্রবাহিত করার ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয় এবং একাধিক নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয় তাকে তড়িৎবিশ্লেষ্য কোষ বলে।
গলিত লবণের তড়িৎ বিশ্লেষণ : তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্যে দুটি ধাতব পাত নিমজ্জিত করে ধাতব তারের সাহায্যে সংযুক্ত করে বর্তনী গঠন করা হয়। যে তড়িৎদ্বারটিকে ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্তের সাথে যুক্ত করা তাকে অ্যানোড এবং যে তড়িৎদ্বারটিকে ব্যাটারির ঋণাত্মক প্রান্তের সাথে যুক্ত হয় তাকে ক্যাথোড বলে। সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) একটি তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ। গলিত অবস্থায় NaCl এর অণুগুলো বিয়োজিত হয়ে Na+ এবং Cl– আয়ন উৎপন্ন করে। এখন গলিত NaCl -এর মধ্যে প্লাটিনাম ক্যাথোড এবং গ্রাফাইটের তৈরি অ্যানোডের সাহায্যে তড়িৎ চালনা করলে Na+ আয়নগুলো ক্যাথোডে যায় এবং প্রত্যেকটি একটি করে ইলেকট্রন গ্রহণ করে সোডিয়াম ধাতু (Na) তে পরিণত হয়। Cl– আয়নগুলো অ্যানোডের দিকে এবং প্রত্যেকটি একটি করে ইলেকট্রন ত্যাগ করে ক্লোরিন পরমাণুতে পরিণত হয়। দুটি ক্লোরিন পরমাণু পরস্পর যুক্ত হয়ে ক্লোরিন অণু (Cl2) গঠন করে।
এভাবে গলিত NaCl এর তড়িৎ বিশ্লেষণে ক্যাথোডে ধাতব Na
এবং অ্যানোডে ক্লোরিন গ্যাস (Cl2) পাওয়া যায়।
NaCl(aq) ↔ Na+(aq) + 2Cl–(aq)
ক্যাথোডে বিক্রিয়া (বিজারণ) : Na+ + e– → Na
অ্যানোডে বিক্রিয়া (জারণ) : 2Cl– → Cl2 + 2e–
গাঢ় NaCl দ্রবণের তড়িৎ বিশ্লেষণ : NaCl এর গাঢ় জলীয় দ্রবণকে ব্রাইন বলে । গাঢ় জলীয় দ্রবণে NaCl অণুগুলো বিয়োজিত হয়ে Na+ এবং Cl– আয়ন উৎপন্ন করে। এই অবস্থায় পানির অণুও সামান্য বিয়োজিত হয়ে H+ এবং OH– আয়ন উৎপন্ন করে। NaCl তীব্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য বলে দ্রবণে প্রচুর পরিমাণে Na+ এবং Cl– আয়ন উপস্থিত থাকে।
NaCl(aq) ↔ Na+(aq) + 2Cl–(aq)
H2O(l) ↔ H+(aq) + OH–(aq)
তড়িৎ প্রবাহকালে Na+এবং H+ আয়নগুলো ক্যাথোডের দিকে এবং Cl– এবং OH– আয়নগুলো অ্যানোডের দিকে ধাবিত হয়। Na+আয়নের চেয়ে H+ আয়ন অপেক্ষাকৃত কম ধনাত্মক তড়িৎধর্মী, তাই H+ আয়ন প্রথমে ক্যাথোডে যায় এবং ইলেকট্রন গ্রহণ করে H পরমাণুতে পরিণত হয়। দুটি H পরমাণু পরস্পর যুক্ত হয়ে H2 অণু গঠন করে।
OH– এবং Cl– আয়নের মধ্যে হাইড্রোক্সিল আয়ন ক্লোরাইড আয়নের চেয়ে কম ঋণাত্মক তড়িৎধর্মী বলে OH– আয়ন অ্যানোডে গিয়ে ইলেকট্রন ত্যাগ করে OH– মূলকে পরিণত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। কিন্তু যেহেতু দ্রবণটি গাঢ়, তাই দ্রবণে Cl– আয়নের ঘনমাত্রা OH– আয়নের ঘনমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি থাকে, সেই জন্য Cl– আয়ন অ্যানোডে গিয়ে ইলেকট্রন ত্যাগ করে Cl পরমাণুতে পরিণত হয়। দ্রবণে Na+আয়ন এবং OH– আয়ন একত্রিত হয়ে ক্ষার NaOH উৎপন্ন করে।
ক্যাথোড বিক্রিয়া: 2H++ 2e– →2H; 2H → H2↑
অ্যানোড বিক্রিয়া: 2Cl – 2e → 2Cl; 2Cl → Cl2↑
এভাবে উৎপন্ন NaOH এর সঙ্গে অ্যানোডের Cl পরমাণু বিক্রিয়া করে NaCl এবং NaOCl উৎপন্ন করে।
2NaOH + Cl2 → NaCl + NaOCl + H2O
(e) নং প্রশ্নর উত্তর:-
বিশ্লেষণ : তড়িৎবিশ্লেষ্য কোষে বাইরের বিদ্যুৎ উৎস হতে বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। এ কারণে, তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষের বাহ্যিক বর্তনীতে তড়িচ্চালক বলের উৎস যেমন ব্যাটারি যুক্ত করা হয়। এ ব্যাটারি দ্বারা অ্যানোড ও ক্যাথোড সংযোগ স্থাপন করা হয়। ফলে অ্যানোড ও ক্যাথোড বিক্রিয়া অর্থাৎ রেডক্স বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। অর্থাৎ রেডক্স বিক্রিয়া বাহ্যিক উৎসের বিদ্যুৎ প্রবাহের উপর নির্ভরশীল। তড়িৎশক্তি ব্যয় করে এ কোষে রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত করা হয়।
অপরদিকে, তড়িৎ রাসায়নিক কোষে। রাসায়নিক বিক্রিয়ার শক্তি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়। এ কোষের বাহ্যিক বর্তনীতে কোনো পরিবাহী তার থাকলেই চলে; বিদ্যুৎ উৎস যেমন ব্যাটারি যুক্ত থাকে না। বাহ্যিক বর্তনীতে তড়িৎ পরিবাহী তার দ্বারা সংযোগ স্থাপন করলে এ কোষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। অর্থাৎ কোষের রেডক্স বিক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে। তড়িৎ রাসায়নিক কোষ তড়িৎ শক্তি উৎপাদী কোষ। অতএব, সামগ্রিক আলোচনার শেষে বলা যায় যে, তড়িৎবিশ্লেষ্য কোষ বিদ্যুৎ শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তর করে এবং তড়িৎ রাসায়নিক কোষ রাসায়নিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করে অর্থাৎ তাদের শক্তির রূপান্তর ভিন্ন।
(f) নং প্রশ্নর উত্তর:-
কোষ-৩ একটি গ্যালভানিক কোষ। উদ্দীপকের কোষটি হতে দীর্ঘসময় ধরে তড়িৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে, নিচে তা মতামতসহ দেওয়া হলো- উদ্দীপকের কোষটিতে জিঙ্ক অ্যানোড ও কপার ক্যাথোড দণ্ড হিসাবে কাজ করে। জিঙ্ক থেকে দুটি ইলেকট্রন ত্যাগ হয়ে তার দিয়ে কপার দণ্ডে প্রবেশ করলে কপার ঐ ইলেকট্রন দুটি গ্রহণ করে।
অ্যানোড অর্ধকোষ বিক্রিয়া : Zn(s) → Zn2+(aq) + 2e
ক্যাথোড অর্ধকোষ বিক্রিয়া : Cu2+(aq) + 2e– → Cu(s)
এভাবে অ্যানোড ও ক্যাথোডের মধ্যে ইলেকট্রন চলাচলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। আমরা জানি, কোনো একটি বিশেষ আয়ন একা থাকতে পারে না। অর্থাৎ একটি ধনাত্মক আয়ন একটি ঋণাত্মক আয়নের উপস্থিতি ছাড়া তৈরি হয় না। তাই অ্যানোড পাত্রে উৎপন্ন Zn2+(aq) আয়নের সমতুল্য পরিমাণ ঋণাত্মক আয়ন (সালফেট আয়ন) প্রয়োজন হবে। অপরদিকে ক্যাথোড পাত্রের দ্রবণ থেকে Cu2+(aq) আয়ন Cu(s) হিসাবে জমা হওয়ার ফলে সমতুল্য পরিমাণ ঋণাত্মক আয়ন (সালফেট আয়ন) মুক্ত হবে। ফলে একদিকে অ্যানোড পাত্রে ধনাত্মক আয়ন (Zn2+) এবং অন্যদিকে ক্যাথোড পাত্রে ঋণাত্মক আয়ন (সালফেট আয়ন) এর এ আধিক্য ঘটবে। ফলে বিদ্যুৎ চলাচল প্রাথমিক অবস্থায় হলেও কিছুক্ষণ পর তা বন্ধ হয়ে যাবে। যদি উদ্দীপকের তড়িৎ রাসায়নিক কোষে লবণ সেতু ব্যবহার করা হয় তবে লবণ সেতু মধ্যস্থ (KCl) অ্যানায়ন ও ক্যাটায়ন করা হয় তবে লবণ সেতু মধ্যস্থ (KCl) | অ্যানায়ন ও ক্যাটায়ন যথাক্রমে অ্যানোড অর্ধকোষ ও বিজারণ | অর্ধকোষের দিকে ধাবিত হয় এবং অতিরিক্ত চার্জ ঘনত্বকে প্রশমিত করে। লবণ সেতু পাত্রদ্বয়ের আয়নের সমতা বজায় রাখে। যেহেতু উদ্দীপকের কোষটিতে লবণ সেতু নেই সেহেতু কোষটি হতে অধিক সময় ধরে তড়িৎ উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।