তড়িৎদ্বার ও এর প্রকারভেদ (Electrode and its classification) :
তড়িৎ বিশ্লেষণকালে যে তড়িৎদ্বারের মাধ্যমে তড়িৎ বিশ্লেষ্যে তড়িৎ প্রবেশ করে, অর্থাৎ যে তড়িৎদ্বার বিদ্যুৎ উৎসের ধনাত্মক (পজেটিভ) প্রান্তের সংগে যুক্ত থাকে তাকে ধনাত্মক তড়িৎদ্বার বা অ্যানোড বলে। Anode গ্রিক শব্দ Ana এবং hodos থেকে এসেছে । ana অর্থ up এবং hodos অর্থ path
আর, যে তড়িৎদ্বারের মাধ্যমে তড়িৎ বিশ্লেষ্য থেকে তড়িৎ নির্গত হয়ে আসে অর্থাৎ যে তড়িৎদ্বার বিদ্যুৎ উৎসের ঋণাত্মক (নিগেটিভ) প্রান্তের সংগে যুক্ত থাকে তাকে ঋণাত্মক তড়িদ্বার বা ক্যাথোড বলে। Cathode গ্রিক শব্দ kata এবং hodos থেকে এসেছে । kata অর্থ down এবং hodos অর্থ path.
তড়িৎদ্বারের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Electrodes)
গঠন প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে তড়িৎদ্বারকে পাচটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যথা :
১. ধাতু–ধাতব আয়ন তড়িৎদ্বার : কোনো ধাতব দণ্ডকে উহার সংশ্লিষ্ট আয়নের দ্রবণে আংশিক নিমজ্জিত করলে যে অর্ধকোষ গঠিত হয় তাকে ধাতু-ধাতব আয়ন তড়িৎদ্বার বলে।।
যেমন : ZnSO4(aq) দ্রবণে Zn দণ্ড এবং CuSO4(aq) দ্রবণে Cu(s) দণ্ড আংশিক নিমজ্জিত করলে এ ধরনের কোষ গঠিত হয় ।
Zn(s)/ Zn2+(aq), Cu(s)/ Cu2+(aq), Ag(s)/ Ag+(aq) ইত্যাদি।
২. ধাতু অ্যামালগাম–ধাতব আয়ন তড়িৎদ্বার : সাধারণত অত্যন্ত সক্রিয় ধাতুর সংগে পারদ মিশ্রিত করে অ্যামালগাম দণ্ড তৈরিপূর্বক উহাকে উহার সংশ্লিষ্ট ধাতব আয়নের দ্রবণে আংশিক নিমজ্জিত করলে যে অর্ধকোষ গঠিত হয় তাকে ধাতু অ্যামালগাম-ধাতব আয়ন তড়িৎদ্বার বলে।
Na-Hg/Na+ অর্ধকোষ বিক্রিয়া, Na-Hg → Na+ + e– + Hg (জারণ)।
৩. ধাতু ও সংশ্লিষ্ট ধাতুর অদ্রবণীয় লবণ সংযোগে তৈরি তড়িদ্বার : কোনো ধাতব দণ্ডকে উহার অদ্রবণীয় কোনো লবণের মধ্যে আংশিক নিমজ্জিত করে এতে ঐ দ্রবণীয় লবণের অ্যানায়ন সম্বলিত একটি দ্রবণ যোগ করলে এ ধরনের তড়িৎদ্বার গঠিত হয়।
Ag দণ্ড বা তারকে উহার অদ্রবণীয় লবণ AgCl এর মধ্যে আংশিক নিমজ্জিত করে উহার অ্যানায়ন সম্বলিত HCI বা NaCl দ্রবণ যোগ করলে এ ধরনের Ag(s), AgCl(s)/ CI–(aq) তড়িৎকোষ গঠিত হয়। অনুরূপ তড়িদ্বার Hg(s), Hg2Cl(s)/ Cl–(aq) এবং ক্যালোমেল তড়িদ্বার Hg(s), Hg2SO4(aq) / SO42-(aq)।
৪. গ্যাস তড়িদ্বার : নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে কোনো গ্যাসকে (যেমন H2 এবং Cl2 ইত্যাদি), উহার আয়নের দ্রবণে ধাতুর পত বা তার আংশিক নিমজ্জিত করে বুদবুদ আকারে গ্যাস চালনা করলে যে তড়িৎদ্বার গঠিত হয় তাকে তড়িৎদ্বার বলে।
যেমন : 25°C তাপমাত্রায় 1.0 atm চাপে বিশুদ্ধ H2 গ্যাসকে HCI এসিড দ্রবণে নিস্ক্রিয় ধাতু পাতের উপস্থিতিতে চালনা করলে H2 গ্যাস তড়িদ্বার গঠিত হয়।
H2(g) গ্যাস তড়িৎদ্বার : Pt, H2(g)(1.0 atm) / H+(aq) ;অর্ধকোষ বিক্রিয়া H2 → 2H+ + 2e– (জারণ)
Cl2(g) গ্যাস তড়িৎদ্বার : Pt, Cl2(g)(1.0 atm) / CI–(aq) ; অর্ধকোষ বিক্রিয়া 2Cl → Cl2 + 2e– (জারণ)
৫. জারণ–বিজারণ তড়িৎদ্বার : কোনো ধাতুর ভিন্ন জারণ সংখ্যা বিশিষ্ট দুইটি আয়নের দ্রবণে একটি নিষ্ক্রিয় ধাতু (যেমন:Pt, Pd, Au) ইত্যাদির পাত বা তার নিমজ্জিত করলে যে তড়িৎদ্বার গঠিত হয় তাকে জারণ-বিজারণ তড়িৎদ্বার বলে। যেমন : Pt, Fe2+/ Fe3+ অর্ধকোষ বিক্রিয়া : Fe2+ → Fe3+ + e– (জারণ)