১. KCl এবং CaCl2 এর মধ্যে কোনটি বেশি আয়নিক?
প্রশ্নে অ্যানায়নদ্বয়ের (Cl–) এর আকার ও চার্জ ঘনত্ব একই রকম এবং ক্যাটায়নের() চার্জ ঘনত্ব সমান কিন্তু আকার ভিন্ন। তাই প্রশ্নের ব্যাখ্যা ক্যাটায়নের (K+) আকার দ্বারা করতে হবে। ফাযানের সূত্র হতে আমরা জানি যে, ক্যাটায়নের আধান যত বেশি হবে অ্যানায়নের তত বেশি বিকৃতি ঘটবে অর্থাৎ পোলারায়ন বেশি ঘটবে। উৎপন্ন যৌগের সমযোজী প্রকৃতি যত বেশি হবে আয়নিক প্রকৃতি তত কমবে। ক্যাটায়ন দ্বারা অ্যানায়নকে পোলারায়ন করার ক্ষমতা ক্যাটায়নের ধনাত্মক চার্জ বৃদ্ধির সাথে বৃদ্ধি পায়। এখানে KCl থেকে CaCl2 এর ক্যাটায়নে চার্জ এক একক বেশি। ফলে K+ আয়নের চেয়ে Ca2+ আয়নের পোলারায়ন ক্ষমতা বেশি। পোলারায়ন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকলে আয়নিক ধর্ম হ্রাস পেয়ে সমযোজী ধৰ্ম বৃদ্ধি পায়। যেহেতু CaCl2 এর পোলারায়ন ক্ষমতা বেশি তাই এটি অধিক সমযোজী হবে। অপরদিকে, যেহেতু KCl এর পোলারায়ন ক্ষমতা কম তাই ইহা কম সমযোজী । অর্থাৎ বেশি আয়নিক হবে। এ কারণেই KCl, CaCl2অপেক্ষা বেশি আয়নিক।
২. FeCl2 এর চেয়ে FeCl3 এর গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক কম কেন?
FeCl2 ও FeCl3 এ Fe এর জারণ সংখ্যা যথাক্রমে +2 ও +3। Fe2+ অপেক্ষা Fe3+ এর ধনাত্মক চার্জ বেশি হওয়ায় আকার ছােট। ফলে অ্যানায়নের ইলেকট্রন মেঘের উপর Fe2+ অপেক্ষা Fe3+ এর আকর্ষণ বেশি হবে। অর্থাৎ পোলারাইজেশন বেশি হবে। ফলে FeCl2 অপেক্ষা FeCl3 এর সমযোজী ধর্ম বৃদ্ধি পাবে। সমযোজী যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক আয়নিক যৌগ অপেক্ষা কম। ফলে FeCl2 অপেক্ষা FeCl3 এর গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক কম হবে।
৩. সিলভার হ্যালাইডগুলোর মধ্যে কোনটি পানিতে অদ্রবণীয় ?
ফাযানের সূত্র হতে আমরা জানি, সম-আধানযুক্ত অ্যানায়নের আকার যত বড় হবে, যৌগের পোলারায়ন তত বেশি হবে অর্থাৎ সমযোজী বৈশিষ্ট তত বেশি বেড়ে যাবে। অর্থাৎ কোনো যৌগের আয়নসমূহ খুব বেশি পরিমাণ পোলারায়িত হলে তার সমযোজী ধর্ম এত বৃদ্ধি পায় যে এসব যৌগ পানিতে অদ্রবণীয় হয়।
অ্যানায়নের আকার বৃদ্ধি সমযোজী বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি দ্রাব্যতা হ্রাস। উপরের ক্রম থেকে দেখা যাচ্ছে যে, অ্যানায়নের আকার বাড়ার সাথে সাথে আয়নিক যৌগগুলোর সমযোজী বৈশিষ্ট্য বেড়ে যাচ্ছে। আয়নিক যৌগসমূহ পোলার দ্রাবকে দ্রবণীয় এবং সমযোজী যৌগসমূহ অদ্রবণীয়। সিলভার হ্যালাইডগুলোর মধ্যে AgF এ অ্যানায়নের পোলারায়ন সবচেয়ে কম, এ কারণে এটি পানিতে দ্রবণীয়। অন্য হ্যালাইডসমূহের পোলারায়ন তত বেশি যে, এরা সমযোজী বৈশিষ্ট্য লাভ করে। ফলে আর পানিতে দ্রবণীয় হয় না।
৪. AlF3 আয়নিক যৌগ হলেও AlCl3 এর অণুতে সমযোজী বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত প্রবল ব্যাখ্যা করো ?
AlF3 এবং AlCl3 যৌগ দুটি হতে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, যৌগ দুটির ক্যাটায়ন একই (Al3+) আবার অ্যানায়নের চার্জ সংখ্যাও সমান। সুতরাং সমযোজী বৈশিষ্ট্য ক্যাটায়ন বা অ্যানায়নের চার্জের উপর নির্ভরশীল নয়। এটা নির্ভর করছে অ্যানায়নের আকারের উপর। ফাযানের সূত্রানুসারে, অ্যানায়নের আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে পোলারায়ন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং অ্যানায়নের আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে সমযোজী বৈশিষ্ট্যও বৃদ্ধি পায়।
উপরোক্ত যৌগ দুটির মধ্যে F– আয়নের আকারের তুলনায় Cl– আয়নের আকার বড়। সুতরাং Cl– আয়নের যৌগ ভাগ AlCl3 এর পোলারায়ন ক্ষমতা F– আয়নের যৌগ অর্থাৎ AlF3 এর চাইতে বেশি। এভাবেই বলা যায় যে, AlF3 এত তুলনায় AlCl3 এর সমযোজী বৈশিষ্ট্য বেশি। এ কারণেই AlF3আয়নিক যৌগ হলেও AlCl3 সমযোজী যৌগ।
৫. AgCl হলুদ HgCl সাদা, কিন্তু HgI2 লাল; PbCl2 সাদা, কিন্তু Pbl2 সোনালি হলুদ হয় কেন?
সাধারণত d ও f অরবিটালে অযুগ্ম ইলেকট্রনবিশিষ্ট আয়নের যৌগসমূহ বর্ণযুক্ত হয়। যৌগের বর্ণযুক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো অ্যানায়নের বেশি পোলারায়ন। অক্সাইড, সালফাইড প্রভৃতি আয়নের পোলারায়িত হওয়ার প্রবণতা বেশি। ক্যাটায়ন যেমন Hg2+ , Cu2+ Cd2+, Pb2+ প্রভৃতির সাথে উপরিউক্ত অ্যানায়নসমূহের যৌগে অ্যানায়নসমূহ খুব বেশি পোলারায়িত হয়; ফলে এ সব যৌগ বর্ণযুক্ত হয়। যেমন: CuS, PbS, HgS কালো, CdS হলুদ।
AgF, AgCl, AgBr ও AgI সিরিজে Ag+ আয়নের পোলারায়ন ক্ষমতা বেশি। হ্যালাইড আয়নসমূহের মধ্যে F– ও Cl– আয়ন কম পোলারায়িত হয় তাই AgF, AgCl বর্ণহীন বা সাদা Br– আয়ন বেশি পোলারায়িত হওয়ায় AgBr হালকা হলুদ। আয়োডাইড (I–) আয়ন আরও বেশি পোলারায়িত হওয়ায় AgI গাঢ় হলুদ হয়। পোলারায়িত অবস্থায় বর্ণ সৃষ্টির মূল কারণ হলো অ্যানায়নের আকার বৃদ্ধির সাথে পোলারায়ন যেমন সহজে ঘটে, তেমনি আয়নের পূর্ণ অরবিটাল থেকে ক্যাটায়নের খালি করা অরবিটালে ইলেকট্রনের ক্ষণিক স্থানান্তর সহজে ঘটে থাকে তখন প্রয়োজনীয় কম শক্তি দৃশ্যমান আলো থেকে শোষিত হয় এবং অবশিষ্ট আলোর বর্ণে যৌগটি বর্ণয়,অ্যানায়নের আকার ছোট হলে পোলারায়ন কম ঘটে । তখন ঐ ছোট অ্যানায়ন থেকে ক্যাটায়নের দিকে ইলেট্রন স্থানান্তর (যা বিস্তারণ বা লন্ডন বল নামে পরিচিত) ঘটানোর জন্য অপেক্ষাকৃত বেশি শক্তি প্রয়োজন হয় ফ্রিকুয়েন্সি যুক্ত UV রশ্মি থেকে শক্তি শোষিত হয় এবং যৌগটি বর্ণহীন বা সাদা দেখায়। যেমন: AgCl হলুদ HgCl সাদা, কিন্তু HgI2 লাল; PbCl2 সাদা, কিন্তু Pbl2 সোনালি হলুদ হয়ে থাকে।
শিক্ষার্থীর কাজ
(১) NaCl অপেক্ষা CuCl এর গলনাঙ্ক কম কেন?
২. CaCl2 ও MgCl2 এর মধ্যে কোনটির গলনাঙ্ক বেশি এবং কেন?
৩. KCl ও CaCl2 এর মধ্যে কোনটি বেশি আয়নিক ব্যাখ্যা করো।
৪. অ্যানায়ন দ্বারা ক্যাটায়নের পোলারায়ন হয় না কেন?
৫. পোলারিটি ও পোলারায়নের পার্থক্য কী?
৬. NaCl, LiCl, KCl, CsCl যৌগকে গলনাঙ্কের ক্রমানুসারে সাজাও।
৭. MgCl2, CaCl2, AICl3, FeCl3 যৌগকে সমযোজী বৈশিষ্ট্যের ক্রমানুসারে সাজাও।
৮. CaCl2, CaBr2, CaF2, CaI2, যৌগকে গলনাঙ্কের ক্রমানুসারে সাজাও।
৯. NaCl, AlCl3, KCl, CaCl2 যৌগকে দ্রাব্যতার ক্রমানুসারে সাজাও।
১০. AgCI, AgF, AgI, AgBr যৌগকে সমযোজী বৈশিষ্ট্যের ক্রমানুসারে সাজাও।
১১. LiCl, KCl, NaCl, CsCl যৌগকে সমযোজী বৈশিষ্ট্যের ক্রমানুসারে সাজাও।
১২. LiCl, NaCl, KCl, RbCl যৌগকে আয়নিক বৈশিষ্ট্যের ক্রমানুসারে সাজাও।
১৩. AgF, AgBr, AgCI, AgI যৌগকে দ্রাব্যতার ক্রমানুসারে সাজাও।
১৪. AlCl3, SiCl, NaCI, MgCl2 যৌগকে দ্রাব্যতার ক্রমানুসারে সাজাও।
১৫. MgO, NaO, Al2O3 যৌগকে আয়নিক বৈশিষ্ট্যের ক্রমানুসারে সাজাও।
১৬, NaCO3, K2CO3, BaCO3, MgCO3 কে বিয়োজন তাপমাত্রার ক্রমানুসারে সাজাও।
১৭. AgF, AgBr, AgI, AgCl কে গলনাঙ্কের ক্রমানুসারে সাজাও।
১৮. FeCl2, CuCl2, CaCl2, ZnCl2 যৌগকে গলনাঙ্কের ও স্ফুটনাঙ্কের ক্রমানুসারে সাজাও।
১৯. CaCl, FeCl2, CuCl, ZnCl2 এর মধ্যে কোনটির গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্কের মান বেশি?
২০. NaCl এর গলনাঙ্ক কত?
২১. CaCl2, CaF2, CaBr2, Cal2 এর মধ্যে কোনটির গলনাঙ্কের মান বেশি?
২২. CaCl2, CaF2, CaBr2, Cal2 এর মধ্যে কোনটির গলনাঙ্কের মান বেশি?
২৩. NaCl, AlCl3, KCl, CaCl এর মধ্যে কোনটির গলনাঙ্ক কম?
২৪. NaCl, CaCl2, BaCl2, AlCl2 এর মধ্যে কোনটির দ্রাব্যতা বেশি?
২৫. NaCl, MgCl2, AlCl3, SiCl4 এর দ্রাব্যতার সঠিক ক্ৰম কী হবে?
২৬. Si, Al, N, Cl এর মধ্যে কোন মৌল সবচেয়ে বেশি সমযোজী বন্ধন সৃষ্টির প্রবণতা দেখায়?
২৭. BaSO4, PbSO4, PbSO4, Na2SO4 এর মধ্যে কোনটি পানিতে দ্রবণীয়?
২৮. Na2O, Al2O3, SiO2, FeO এর মধ্যে কোনটির বন্ধন সমযোজী?
২৯. Be2+, Ba2+ Mg2+ আয়নের মধ্যে কোনটির পোলারায়ন ক্ষমতা বেশি?