প্রশ্ন: S-ব্লক মৌল কী?
উত্তর: যে সব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি s অরবিটালে প্রবেশ করে সেগুলোকে s -ব্লক মৌল বলা হয়। পর্যায় সারণির গ্রুপ IA এবং গ্রুপ IIA এর মৌলসমূহ এবং শূন্য গ্রুপের He s- ব্লকের অন্তর্ভুক্ত। যেমন-H (1) – 1s1 ।
Mg (12) – 1s2 2s2 2p6 3s2
প্রশ্ন:S-ব্লক মৌলসমূহের সাধারণ ধর্ম সমূহ লিখ?
উত্তর: পর্যায় সারণির গ্রুপ IA এবং IIA মৌলসমূহ s ব্লক ভুক্ত। গ্রুপ-IA এর মৌলসমূহ তীব্র তড়িৎ ধনাত্মক এবং এ শ্রেণিভুক্ত ধাতুগুলো পানির সাথে বিক্রিয়া করে তীব্র ক্ষার উৎপন্ন করে। এজন্য এদেরকে ক্ষার ধাতু বলা হয়।
যেমন- 2Na + 2H2O → 2NaOH + H2
গ্রুপ-IIA শ্রেণিভূক্ত কতিপয় মৌল যেমন Ca এবং Mg যৌগরূপে মাটিতে পাওয়া যায় এবং এরা পানির সাথে বিক্রিয়া করে ক্ষার উৎপন্ন করে। এজন্য এদেরকে মৃৎক্ষারীয় ধাতু বলা হয় । যেমন- Mg + 2H2O → Mg(OH)2 + H2 । এছাড়াও s-ব্লক মৌলসমূহের কিছু সাধারণ ধর্ম রয়েছে, যা নিম্নরূপ:
(i) এরা নরম ও নমনীয়।
(ii) এদের ক্যাটায়নের ইলেকট্রন বিন্যাসে কোনো বিজোড় ইলেকট্রন নেই বলে ক্যাটায়নসমূহ ডায়াম্যাগনেটিক এবং বর্ণহীন।
(iii) এদের যোজ্যতা স্তরে ইলেকট্রন সংখ্যা কম বলে এদের বিজারণ ক্ষমতা আছে ।
(v) এরা তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী।
(vi) এদের গলনাংক ও স্ফুটনাংক নিম্ন এদের মধ্যে সর্বোচ্চ গলনাংক হলো Be-এর গলনাংক 1287°C এবং Ra এর গলনাংক 700°C।
(vii) এরা উজ্জ্বল বা সিলভার বর্ণের হয়।
(viii) এদের আয়নীকরণ শক্তি তুলনামূলক কম।
(ix) এদের ইলেকট্রন আসক্তি তুলনামূলক কম।
(x) এদের তড়িৎ ঋণাত্মকতা তুলনামূলক কম।
(xi) এরা তীব্র তড়িৎ ধনাত্মক তাই এরা অধাতুর সাথে সহজেই শক্তিশালী আয়নিক বন্ধন তৈরি করে।
(xii) এরা তীব্র বিজারক হিসেবে আচরণ করে।
(xiii) Be এবং Mg বাদে প্রায় সকলেই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিখাবর্ণ প্রদর্শন করে।
(xiv) এদের যোজনী 1 অথবা 2।
(xv) এদের জারণ সংখ্যা +1 এবং + 2।
প্রশ্ন: গ্রুপ-IA ধাতু গুলো তীব্র ক্ষার ধাতু কেন?
উত্তর: গ্রুপ-IA এর মৌলসমূহ তীব্র তড়িৎ ধনাত্মক এবং এ শ্রেণিভুক্ত ধাতুগুলো পানির সাথে বিক্রিয়া করে তীব্র ক্ষার উৎপন্ন করে। এজন্য এদেরকে তীব্র ক্ষার ধাতু বলা হয়।
যেমন- 2Na + 2H2O → 2NaOH + H2
প্রশ্ন: গ্রুপ-IIA ধাতু গুলো মৃদ ক্ষার ধাতু বলা হয় কেন?
উত্তর: গ্রুপ-IIA শ্রেণিভূক্ত কতিপয় মৌল যেমন Ca এবং Mg যৌগরূপে মাটিতে পাওয়া যায় এবং এরা পানির সাথে বিক্রিয়া করে মৃদু ক্ষার উৎপন্ন করে। এজন্য এদেরকে মৃৎক্ষারীয় ধাতু বলা হয়।
যেমন- Mg + 2H2O → Mg(OH)2 + H2
প্রশ্ন: সোডিয়াম ধাতুকে কেরোসিনের মধ্যে সংরক্ষণ করা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
সোডিয়াম ধাতু অতীব সক্রিয় গ্রুপ-1 এর ধাতু। সোডিয়াম ধাতুকে বাতাসে ও পানিতে রাখা যায় না। কারণ এর সংস্পর্শে বাতাসের মধ্যস্থ অক্সিজেনের সাথে Na ধাতু বিক্রিয়া করে সোডিয়াম অক্সাইড গঠন করে। পরে উৎপন Na2O বাতাসের CO2 গ্যাসের সাথে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম কার্বনেটে পরিণত হয় ।
4Na + O2 → 2Na2O
Na2O + CO2 → Na2CO3
আবার সোডিয়াম ধাতুকে পানিতেও রাখা যায় না। পানির সংস্পর্শে সোডিয়াম ধাতু পানির সাথে প্রবলভাবে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড ক্ষার ও H2 গ্যাস উৎপন্ন করে। এটি তাপপাৎপাদী বিক্রিয়া হওয়ায় উৎপন্ন H2 গ্যাসে আগুন ধরে যায়। ফলে পানি উৎপন্ন হয়।
2Na(s) + 2H2O(1) → 2NaOH(aq) + H2(g) + তাপ
2 H2(g) + O2(g) → 2H2O(1)
তাই সোডিয়াম ধাতুকে নিষ্ক্রিয় তরল পদার্থ কেরোসিনের মধ্যে সংরক্ষণ করা হয়।
প্রশ্ন: আদর্শ মৌল (Ideal elements) কী?
উত্তর: প্রকৃতিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের মৌল গুলো যতেষ্ঠ পরিমাণে পাওয়া যায়। যেকোনো মৌলকে প্রথম মৌলর ধরে সামনের দিকে অগ্রসর হলে এ মৌলটির সাথে তৃতীয় পর্যায়ের মৌলটির ধর্মের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যবধানে মৌলের ধমের পুনরাবৃত্তি ঘটে। এজন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের মৌলগুলোকে আদর্শ মৌল বলা হয়।
এছাড়া চতুর্থ পর্যায়ের K(19), Ca(20) এবং Ga(31) থেকে Kr(36) এ 8টি মৌলও আদর্শ মৌল। পঞ্চম পর্যায়ের Rb(37), Sr(38) এবং In(49) থেকে Xe(54) এ 8টি মৌলও আদর্শ মৌল। সপ্তম পর্যায়ের Fr(87) ও Ra(88) মৌলও আদর্শ মৌল।
প্রশ্ন: দুষ্ট মৌল (Rogue Element) কী?
উত্তর: ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক সংখ্যা অনুসারে মৌলগুলোকে পর্যায় সারণিতে স্থান দিতে বিজ্ঞানী মেন্ডেলিফ লক্ষ করেন যে, গ্রুপ-1 এর ক্ষার ধাতুগুলোর সাথে H-এর ধর্মের যেমন বেশ কিছু সাদৃশ্য আছে ঠিক একইভাবে 17-তম গ্রুপের হ্যালোজেন মৌলগুলোর ধর্মের সাথেও এর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্য আছে। এ কারণ H কে গ্রুপ-1 ও গ্রুপ-17 উভয় গ্রুপেই স্থান দেয়া যায়। পর্যায় সারণিতে H এর সঠিক অবস্থান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মেন্ডেলিফ বেশ কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হন বলে হাইড্রোজেনকে তিনি দুষ্ট মৌল’ নামে অভিহিত করেন।
প্রশ্ন: গ্রুপ-IA ধাতু গুলোর আয়নীকরণ শক্তি (Ionisation potential) নিম্ন কেন?
উত্তর: ক্ষার ধাতুসমূহের যোজ্যতা স্তরে একটিমাত্র ইলেকট্রন (ns1) থাকায় তা নিউক্লিয়াস দ্বারা দুর্বলভাবে আকৃষ্ট থাকে, তাই এই ইলেকট্রনকে কম শক্তি দ্বারা সহজে অপসারণ করা সম্ভব। এজন্য ক্ষার ধাতুসমূহের প্রথম আয়নীকরণ শক্তি কম।
যেমন: 11Na+ = 1s2 2s2 2p6 (নিয়নের গঠন) – ১ম আয়নীকরণ শক্তি = 496 kJ/mole
11Na2+ = 1s2 2s2 2p5 (সাধারণ অবস্থায় অসম্ভব) – ২য় আয়নীকরণ শক্তি = 4562 kJ/mole
একটি ইলেকট্রন ত্যাগের পর ক্ষার ধাতুসমূহের ধনাত্মক আয়নের আকার ছোট হয় এবং নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জন করে; যা খুবই সুস্থিত। এ কারণে ক্ষার ধাতুসমূহের ২য় আয়নীকরণ শক্তি অনেক বেশি হয়। যা সাধারণ অবস্থায় সম্ভব নয় । নিষ্ক্রিয় গ্যাসের সর্বশেষ স্তরে ইলেকট্রন অরবিটাল গুলোতে যুগল অবস্থায় থাকে। যুগল অবস্থায় দুই ইলেকট্রন পরস্পরের বিপরীত স্পিনে প্রবল চৌম্বকীয় আকর্ষণে আবদ্ধ থাকায় একটি ইলেকট্রনকে যুগল হতে বিচ্ছিন্ন করতে অতি উচ্চ শক্তির দরকার হয়। ২য় আয়নীকরণ শক্তি অনেক বেশি হওয়ায় গ্রুপ IA এর মৌলসমূহ কখনও দুই আধান বিশিষ্ট ধনাত্মক আয়ন (M2+) গঠন করে না।
প্রশ্ন: মানব শরীরে Na+ ও K+ আয়নের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মানবদেহের জীবন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয়তা ২৫টি মৌলের (essential elements) মধ্যে সোডিয়াম ও পটাসিয়াম অন্যতম। মানুষের শরীরের সকল প্রকার কোষে (Cells) Na+ এবং K+ আয়ন বিদ্যমান থাকে। মানবদেহে গড়ে 0.1% Na+ এবং 0.35% K+ আছে Na+ এবং K+ আয়নের জৈব রাসায়নিক ভূমিকা নিম্নরূপ:
১. Na+ এবং K+ আয়ন শরীরকে সুস্থিত (Stable) অবস্থায় রাখতে এবং যথাযথভাবে খাদ্য পরিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে। পরিপাক কৌশলে (Metabolism) Na+ আয়ন প্রধানত বহিঃকোষ আয়ন (0.15 mol/dm3) এবং K+ আয়ন প্রধানত অন্তঃকোষ আয়ন (0.12 – 0.16 mol/dm3) হিসেবে আলাদা ঘনমাত্রায় অবস্থান করে।
২. মানব রক্তের কোষে (blood cells) সোডিয়াম আয়নকে সরিয়ে পটাসিয়াম আয়ন স্থাপিত হতে চায় এবং Na+ : K+ 7 : 1 অনুপাতে বজায় থাকে। শরীরের সুস্থিতির জন্য রক্তে এই অনুপাত খুবই প্রয়েঅজনীয়।
৩. মানবদেহের অনেক এনজাইম Na+ এবং K+ আয়ন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
৪. পটাসিয়াম এবং সোডিয়ামের নির্দিষ্ট সাম্যাবস্থায় আনুপাতিক উপস্থিতি স্নায়ু সেলের বৃদ্ধি এবং কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। বস্তুতপক্ষে, স্নায়ু সেলের কার্যকারিতা মূলত K+ আয়নের গাঢ়ত্ব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
প্রশ্ন: গ্রুপ-IIA ধাতু গুলোর ২য় আয়নীকরণ(Ionisation potential) শক্তি ১ম আয়নীকরণ শক্তি অপেক্ষা বেশি কেন?
উত্তর: মৃৎক্ষার ধাতুসমূহের ২য় আয়নীকরণ শক্তি ১ম আয়নীকরণ শক্তি অপেক্ষা দ্বিগুণের মতো হয়।
যেমন 12Mg+ = 1s2 2s2 2p6 3s2 ১ম আয়নীকরণ শক্তি = 738 kJ/mole
12Mg2+ = 1s2 2s2 2p6 3s2 ২য় আয়নীকরণ শক্তি = 1450 kJ/mole
এর কারণ হচ্ছে, মৌলটি যখন চার্জ নিরপেক্ষ অবস্থায় থাকে তখন নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক চার্জ (প্রাটোন) সংখ্যা এবং বাইরের ঋণাত্মক চার্জ (ইলেকট্রন) সংখ্যা সমান থাকে। একটি ইলেকট্রন ত্যাগের ফলে (১ম আয়নীকরণ) নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক চার্জ সংখ্যা একই থাকে কিন্তু বাইরের ঋণাত্মক চার্জ সংখ্যা একটি কমে যায়। ফলে নিউক্লিয়াস দৃঢ়ভাবে বাইরের ইলেকট্রনকে আকর্ষণ করে। এ কারণে আরেকটি ইলেকট্রন অপসারণ করতে (২য় আয়নীকরণ) অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন: গ্রুপ-IIA ধাতু Be ও Mg শিখা পরীক্ষায় কোনো বর্ণ উৎপন্ন হয় করে না কেন?
উত্তর: IIA -ধাতুগুলোর যৌগ ঘন HCl এর উপস্থিতিতে বুনসেন দীপ শিখায় বৈশিষ্ট্যমূলক বর্ণ সৃষ্টি করে। যেমন- Ca ইটের মতো লাল, Sr টকটকে লাল এবং Ba কাচা আপেলের মতো হালকা সবুজ শিখা উৎপন্ন করে । এ সমস্ত মৌলে দীপশিখার সাহায্যে তাপ প্রয়োগ করলে এদের ইলেকট্রনগুলো উত্তেজিত হয়ে উচ্চতর শক্তিস্তরে উন্নীত হয়। পরে ইলেকট্রনগুলো যখন আগের অবস্থায় ফিরে আসে, তখন এরা অতিরিক্ত শক্তিকে দৃশ্যমান আলো হিসেবে বিকিরণ করে। এজন্য এদের ক্ষেত্রে শিখার বর্ণ দেখা যায় । তবে Be ও Mg লবণের শিখা পরীক্ষায় কোনো বর্ণ উৎপন্ন হয় না। কারণ Be ও Mg এর পরমাণুগুলো ক্ষুদ্রাকার। এদের পরমাণুতে ইলেকট্রনগুলো দৃঢ়ভাবে যুক্ত বলে দীপশিখা যোগে শক্তি প্রয়োগ করলেও ইলেকট্রনগুরো উত্তেজিত হয়ে উচ্চশক্তিস্তরে যায় না। তাই কোনো বর্ণ সৃষ্টি হয় না ।
প্রশ্ন: জীব-মৌল রূপে ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: উদ্ভিদ এবং প্রাণীর জীবন প্রক্রিয়ায় অপরিহার্য ২৫টি মৌলের মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম অন্যতম। মানবদেহে গড়ে 0.06% Mg এবং 2.42% Ca আছে । Mg এবং Ca এর জৈব রাসায়নিক ভূমিকা নিম্নরূপ :
১. Mg+2 আয়ন স্নায়ু প্রণোদনা প্রেরণে সহায়তা করে ।
২. Ca+2 আয়ন বিভিন্ন সেল গঠনে এবং সঠিক হৃদস্পন্দন (heart beat) রক্ষণে অতি জরুরি ভূমিকা পালন করে ।
৩. উদ্ভিদ এবং প্রাণীর পরিপাক ক্রিয়ায় এসব ধাতব আয়ন বিশেষ করে Mg+2 আয়ন শক্তি সঞ্চয়ে এবং তা প্রেরণে সহায়তা করে।
৪. উদ্ভিদের সবুজ রং সৃষ্টিকারী ক্লোরোফিল মূলত Mg+2 এর একটি জটিল যৌগ।
৫. Ca+2 আয়ন ফসফেটরূপে প্রাণীদেহে হাড়ের সৃষ্টি, বর্ধন ও পুষ্টিতে সহায়তা করে।
৬. জৈব-ঝিল্লি (Bio-membrane) তৈরি ও রক্ষণের জন্য Ca+2 আয়ন একটি অপরিহার্য অংশ।
৭. রক্তে Ca+2 আয়নের উপস্থিত স্নায়ু এবং মাংসপেশীর যথাযথ কার্যকারিতাকে সহায়তা করে। রক্তে Ca+2 আয়নের পরিমাণ কমে গেলে মাংসপেশীতে প্রদাহ বা অনিয়ন্ত্রিত সংকোচন ঘটে ।
প্রশ্ন: Na2CO3 এর জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী কেন ব্যাখ্যা করো?
উত্তর: Na2CO3 জলীয় দ্রবণে বিক্রিয়া করে তীব্র ক্ষার NaOH ও দুর্বল এসিড H2CO3 উৎপন্ন করে।
Na2CO3 + 2H2O → 2NaOH(তীব্র ক্ষার) + H2CO3(দুর্বল এসিড)
তীব্র ক্ষার NaOH জলীয় দ্রবণে সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয়ে প্রচুর হাইড্রোক্সিল (OH–) উৎপন্ন করে। কিন্তু কার্বনিক এসিড একটি মৃদু এসিড বিধায় এর আংশিক বিয়োজন হয়, এবং খুব সামান্য পরিমাণ H+ উৎপন্ন হয়। এই H+ কিছু OH– দ্বারা প্রশমিত হওয়ার পরও দ্রবণে প্রচুর OH–অবশিষ্ট থাকে। যেহেতু দ্রবণে প্রচুর OH– অবশিষ্ট থাকে যা লাল লিটমাসকে নীল করে। তাই Na2CO3 এর জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী।
Na2CO3 + 2H2O → 2NaOH + H2CO3
NaOH(তীব্র ক্ষার) → Na+ + OH– (সম্পূর্ণ আয়নিত হয়ে অধিক পরিমাণ OH– দেয় ।
H2CO3(দূর্বল অল্প) → 2H+ + CO32- (সম্পূর্ণ আয়নিত হয় না ফলে কম পরিমাণ H+ দেয়)
অধিক পরিমাণ OH– + কম পরিমাণ H+ → H2O + অতিরিক্ত OH–
অতিরিক্ত OH– + লাল লিটমাস = নীল লিটমাস।
বা, pH >7। তাই Na2CO3 এর জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী।
প্রশ্ন: গ্রুপ- IIA ধাতুসমূহের হাইড্রক্সাইডগুলির পানিতে দ্রবণীয়তা ব্যাখ্যা করো।
অথবা, Mg(OH) 2 < Ca(OH)2 < Sr(OH)2 < Ba(OH)2 গুলোর ক্রম ব্যাখ্যা করো?
উত্তর: আয়নিক যৌগসমূহের পানিতে দ্রবণীয়তা ল্যাটিস এনথালপি ও হাইড্রেশন এনথালপির মানের উপর নির্ভরশীল। হাইড্রেশন এনথালপি, ল্যাটিস এনথালপিকে অতিক্রম করলে যৌগটি পানিতে দ্রবীভূত হবে অন্যথায় হবে না। ল্যাটিস এনথালপি ও হাইড্রেশন এনথালপি উভয়ই ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের আধান বৃদ্ধির সাথে বাড়ে এবং তাদের আকার বৃদ্ধির সাথে কমে। যেহেতু IIA মৌলের হাইড্রক্সাইডসমূহের মধ্যে তুলনার ক্ষেত্রে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের আধান এবং অ্যানায়নের আকার একই থাকছে শুধুমাত্র ক্যাটায়নের আকার পরিবর্তন হচ্ছে, সেহেতু এর ক্রম পরিবর্তনের হচ্ছে ক্যাটায়নসমূহের আকার। একই শ্রেণিতে পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধি সাথে সাথে ক্যাটায়নের আকার বাড়ে ক্যাটায়নের আকার বাড়ার সাথে সাথে হাইড্রেশন এনথালপি ও ল্যাটিস এনথালপি উভয়ই হ্রাস পায় । কিন্তু গ্রুপ ধাতুগুলোর হাইড্রোক্সাইড ক্যাটায়নের আকার বৃদ্ধির সঙ্গে হাইড্রক্সাইডসমূহের ল্যাটিস এনথালপির মান যে তা পায়, হাইড্রেশন এনথালপির মান সে হারে হ্রাস পায় না। ফলে হাইড্রেশন এনথালপির পক্ষে ল্যাটিস এনথালপির অতিক্রম করা ক্রমান্বয়ে সহজ হয় বলে Mg থেকে Ba পর্যন্ত হাইড্রোক্সাইডসমূহের দ্রাব্যতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায় । হাইড্রোক্সাইডসমূহের ক্রম Mg(OH) 2 < Ca(OH)2 < Sr(OH)2 < Ba(OH)2 ।
প্রশ্ন: তাপ দিলে BaCO3 এর চেয়ে MgCO3 অনেক সহজে বিয়োজিত হয় কেন?
উত্তর: BaCO3এর চেয়ে MgCO3 বুনসেন দীপের তাপমাত্রায় বিয়োজিত হয়ে স্থিতিশীল অক্সাইডে পরিণত হয় । BaCO3 ও MgCO3 এর মধ্যে কোনটি অধিক তাপে বা কম তাপে বিয়োজিত হবে তা অ্যানায়ন এর উপর নির্ভর করে না। কারণ উভয়ক্ষেত্রে অ্যানায়ন একই। যেহেতু ক্যাটায়ন Ba2+ ও Mg2+ উভয়ের চার্জ সংখ্যা একই যৌগ দুটির বিয়োজন তাপ শুধু ক্যাটায়নের আকারের উপর নির্ভরশীল। Mg2+ এর আকার ছোট বিধায় এর চার্জ ঘনত বেশি। তাই অ্যানায়নকে বেশি পরিমাণে নিজের দিকে আকর্ষণ করে বিকৃত করে বিধায় যৌগটি অস্থিতিশীল হয়, অল্প তাপে বিয়োজিত হয়।
অপরদিকে, Ba2+ এর আকার বড় হওয়ায় চার্জ ঘনত্ব কম থাকে এবং অ্যানায়নকে কম পরিমাণে বিকৃত করতে পারে। যৌগটি স্থিতিশীল থাকে বিধায় বিয়োজন তাপের পরিমাণ অধিক হয়।
এই কারণে তাপ দিলে BaCO3 এর চেয়ে MgCO3 অনেক সহজে বিয়োজিত হয়।